নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু জেলে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার রায়টা ঘাট এলাকায় মাছ ধরছিলেন। খবর পেয়ে ইলিশ শিকার বন্ধে সেখানে অভিযানে যান জেলা ও উপজেলা মৎস কর্মকর্তা। এ অভিযানে তাদের সাথে ভেড়ামারার পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। নদীতে অভিযানকারী স্পিড বোট দেখতে পেয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন জেলে তসলিম। এমনটা দাবি করেছেন কুষ্টিয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী।
তবে নিখোঁজ তসলিমের পরিবারের দাবি, মাঝ নদীতে তসলিমকে লাঠি দিয়ে মারপিট করলে সে নৌকা থেকে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন। নিখোঁজ তসলিম (৫২) ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা নতুন পাড়া এলাকার লোকমান মন্ডলের ছেলে। সে এক ছেলে ও এক মেয়ের সন্তানের বাবা।
রায়টা গ্রামের মৃত জামাত পরামানিকের ছেলে নাজিবুল ইসলাম বলেন, আমি আর তসলিম বুধবার বিকালে পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে যায়। এসময় স্পিটবোড নিয়ে ইলিশ শিকার বন্ধে অভিযানে আসেন মৎস কর্মকর্তারা। তাদের সাথে পুলিশও ছিলো, ভেড়ামারা উপজেলার মহিলা মৎস অফিসার ছিলো। তারা আমাদের নৌকায় কাছে আসে এবং লাঠি দিয়ে তসলিমকে আঘাত করে। তাদের আঘাতে নদীতে পড়ে তলিয়ে যায়। এরপর সে পানি ভেসে উঠলে আবারও লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর সে নিখোঁজ হয়ে যায়। এবং আমি পালিয়ে আসি। আমাদের জেল জরিমানা করতে পারতো তারা, কিন্তু মারপিট করা ঠিক হয়নি। মাঝ নদীতে নিখোঁজ হয়েছে তসলিম।
নিখোঁজ তসলিমের স্ত্রী আদরি খাতুন বলেন, আমরা অসহায় গরীব মানুষ। আমার স্বামী সারাবছর ফরিদপুরে দিনমজুরিতে কাজ করে৷ কয়েকদিন আগে বাড়িতে এসেছে। খাওয়ার জন্য নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিল। এসময় অভিযানে আসা লোকজন আমার স্বামীকে লাঠি দিয়ে মারপিট করে নদীতে ফেলে দেন। সে এখনও নিখোঁজ রয়েছে। জেল জরিমানা দিলে আমাদের কোন অভিযোগ থাকতো না। আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক, তাদের শাস্তি দেওয়া হোক।
অভিযোগ অস্বীকার করে কুষ্টিয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী বলেন, ভেড়ামারায় পদ্মা নদীতে আমরা অভিযানে গিয়েছিলাম। এসময় আমাদের দেখে জেলেরা পালিয়েছে। একজন নৌকা থেকে পানিতে লাফ দিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিকে মারপিট করার অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুণ্ডু বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হবে। যারা অভিযানে গিয়েছিলেন তাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এটার সুষ্ঠু তদন্ত হবে, তদন্ত রিপোর্টের পরে আসল ঘটনা জানা যাবে।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য ভেড়ামারা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাম্মী শিরীনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
ঈশ্বরদী লক্ষীকুন্ডা নৌ থানা পুলিশের (ওসি) ইমদাদুল হোসেন বলেন, নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দল উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। এখনো নদীতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।