মোঃ রবিউল ইসলাম হৃদয় (কুষ্টিয়া) : কুষ্টিয়ার মিরপুরে আতাহার আলী ও তার বাহিনীর নির্যাতন-অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবি সহ আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরাও। তার ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আতংকিত রয়েছে মিরপুর ও নওপাড়া বাজারের প্রায় ৭শতাধিক দোকানদার।

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের শহর আলীর ভাই আতাহার আলী (৫৫)। তিনি মিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের বার বার বহিষ্কৃত নেতা। ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান । বর্তমানে মিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক হিসেবে পদে রয়েছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন এমপি-মন্ত্রীর সাথে ছবি দেখিয়ে ও অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে এলাকার আধিপত্য বিস্তার করে, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, নারী নির্যাতন, নারী কেলেংকারী, অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, থানা আওয়ামীলীগের নেতা আতাহার আলী বর্তমানে চরম বেপড়োয়া হয়ে ওঠেছেন। তার সীমাহীন চাঁদাবাজির ফলে নওপাড়া বাজারের ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। সেখানে প্রায় ২০০টি’র বেশি দোকান রয়েছে।
অন্যদিকে, মিরপুর বাজারে আধিপত্য বিস্তারের উদ্ধেশ্যে গত ২৪ মে দুপুর ১২টায় আতাহার আলী সহ ৮/১০ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেয়ার প্রাক্কালে তার লাইসেন্সকৃত আগ্নেয় অস্ত্র থেকে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করলে বাজারের ৫শতাধিক ব্যবসায়ী তাদের দোকান বন্ধ করে দেন। ইতিমধ্যে পিস্তল হাতে করে হুংকার দেওয়া আতাহার আলীর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এসব ব্যাপারে মিরপুর পৌরসভার মেয়র ও বাজার কমিটির সভাপতি এনামুল হক বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মিরপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছে। হঠাৎ করেই আওয়ামীলীগ নেতা আতাহার আলী চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার হীন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গুলিবর্ষন করে বাজারের ব্যবসায়ীদের মাঝে আতংক তৈরি করে। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ অবিলম্বে তার অস্ত্রের ফরেনসিক রিপোর্ট করে সেটি বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি।
আতাহার আলীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও দৌরাত্মের স্বীকার হয়েছেন মিরপুর পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডের যোগীপুল মহল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ। তিনি জানান, এবছরের রমজান মাসের শেষের দিকে যোগীপুল মসজিদে নামাজ আদায় করে বের হওয়ার সময় আতাহার আলী আমাকে বলে এই মসজিদ কমিটিতে আমার নাম রাখতে হবে এর জবাবে আমি অস্বীকৃতি জানালে আমাকে শাররীকভাবে লাঞ্চিত করে।
তার হাতে লাঞ্চিত হওয়া কুড়িপোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম মহাদ্দেস জানিয়েছেন, চলতি বছরের মে মাসের প্রথম দিকে নওপাড়া বাজারে পিয়াস ফার্মেসিতে ঔষধ কিনতে গেলে আতাহার ও তার লোকজন আমার উপর অর্কিত হামলা চালায়। তার এধরনের অত্যাচার অব্যাহত থাকলে এলাকার কোন শ্রেণী পেশার মানুষ নিরাপদ থাকবে না।
মিরপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ইমন আলী বলেন, আমি আতাহার আলীর হাতে কয়েক দফা শাররীক লাঞ্চিত হয়েছি। কারন সে আমাকে দল বাদ দিয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে যোগ দিতে বলে। এতে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে আমাকে লাঞ্চিত করে। বিষয়টি স্থানীয় দলীয় নেতাদের জানিয়ে বলেছি আমরা দলের নিবেদিত মানুষ, আমরা যদি বর্তমান সরকারের আমলে লাঞ্চিত হই তাহলে দলীয় চেইন অফ কমান্ড ভেঙ্গে পড়বে।
সুত্রে আরও জানা যায়, ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আতাহার আলী তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নজরুল করিমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করে। এর প্রতিবাদে পরদিন মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এছাড়াও সে ২০০৮ সালে মিরপুরের মির্জানগরে আবুল খায়ের কোম্পানীর তামাক বাইং কোর্টে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জোর পূর্বক তামাকের বেশি রেট করাতে গেলে কোম্পানী’র ষ্টাপ এবং স্থানীয়দের হাতে গণপিটুনীর স্বাকীর হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০২২ সালে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এই আতাহার আলী নৌকার টিকিট পেলেও নির্বাচনকালীন সময়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সহ দল ও দলের বাইরে অনেককে কারণে অকারণে মারপিট করে হাসপাতালে পাঠায়।
এসব ব্যাপারে আতাহার আলীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আতাহার আলীর এতসব অপকর্মের ফলে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি এবং এলাকার মানুষের জানমাল নিরাপত্তার হুমকীর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।

Previous articleকুষ্টিয়ার নারিকল তলা থেকে অভিনব কায়দায় অটো চুরি।
Next articleকুমারখালীতে পুর্ব শত্রুরতার জের ধরে হামলায় গুরুতর আহত ১ জন