মোঃ রবিউল ইসলাম হৃদয় : কুমারখালীর কয়াতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকের ব্লাকমেইলের শিকার হয় অপমান সইতে না পেরে জিনিয়া খাতুন (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার অভিযোগ উঠছে।
সোমবার (০৭ আগস্ট) বিকাল আনুমানিক ৪ টার সময় কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়াদি গ্রামের হঠাৎ পাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। নিহত ছাত্রী বারাদী এলাকার জিল্লু শেখের মেয়ে। সে সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সকালের দিকে নিয়মিতভাবে সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস করতে যায় জিনিয়া খাতুন । দুপুরের দিকে সহপাঠীদের সাথে গল্প করলে ঐ স্কুলের শিক্ষক লাল্টু, ওহিদ, শিউলী বেগম সহ কয়েকজন শিক্ষক তাকে ডেকে স্কুলের ভিতর ধুমপান করার অভিযোগ করেন এবং সেটা ভিডিও আছে বলে জানায় স্কুলের শিক্ষকরা। তারপর স্কুল ছুটি হওয়ার প্রায় ২ ঘন্টা পরেও তাদেরকে স্কুলের মধ্যেই আটকিয়ে রেখেছিলেন শিক্ষকরা। পরে ঐ ছাত্রী সবার সামনে অপমানিত হওয়ার ফলে বাড়ীতে এসে কাউকে কিছু না বলে ঘরের দরজা দিয়ে ঘরের ডাবের সাথে ওড়না জড়িয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলে পরিবারের সদস্য বিষয়টি টের পেলে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন এবং ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।বর্তমানে নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী নিহত জিনিয়ার সহপাঠী প্রীতি বলেন, প্রথমে আমরা তিনজন বান্ধবী তিনতলায় চকলেট খাচ্ছিলাম। বিদ্যালয়ে ফুটবল খেলা হচ্ছিলো খেলা দেখছিলাম। আমি জিনিয়া আর সালমা। তারপর হঠাৎ করে আয়া শিউলি আপা এসে আমাদের ডেকে নিয়ে যায়। তারপর লাল্টু স্যার ও ওয়াহিদ স্যার আমাদের বলে তোরা সিগারেট খাইছিস। আমরা বলি না আমরা কোন সিগারেট খাইনি। তখন লাল্টু স্যার আমাদের খুব ফোর্স করে। আমাদের আগে আরো তিনটা মেয়েকে তাদের রুমে ডেকে নিয়ে গেছিল। তাদের তিনজনকেও লাল্টু স্যার অনেক মেরেছে তা দেখে আমরা ভয় পেয়েছিলাম। তখন আমাদের ব্যাগ চেক করে ব্যাগ রেখে দেয়। লাল্টু স্যার আমাদের অনেকবার মারতে গিয়েছিল এবং লাঠি দিয়ে শাসাইছিলো। তারপর লাল্টু স্যার আমাদের ছবি তুলে রেখেছিল আর বলছিল এগুলো নেটে ছেড়ে দেবো। আর লিখব এরা সবাই সিগারেট খায়। তারপরও স্কুল ছুটি হওয়ার ২ ঘন্টা পরে আমাদের ছেড়েছিলো। আমাদের অফিস রুমে আটকে রাখছিলো। আর যে মেয়েটা মারা গেছে ওকে বেশি করে লাল্টু স্যার শাসাইছিলো। লাঠি দিয়ে ভয় দেখাইছিলো।
সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশিদ বলেন,আমি ছিলাম না স্কুলে আমিনবেলা ২ টার সময় গেছিলাম কুমারখালি উপজেলা শিক্ষা অফিসে। তিনজন ছাত্রীর অভিভাবকদের সাথে কথা বলার জন্য একজন শিক্ষক ফোন দিয়েছিলো। আমি বিষয়টি নিয়ে ম্যানিজিং কমিটির সাথে কথা বলেছিলাম। তারপর শুনলাম একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। বিষয়টা অপ্রিতীকর। আমি বিষয়টি খতিয়এ দেখছি। তারপরেও ম্যানিজিং কমিটি আছে তারা তদন্ত করবে।
এ বিষয়ে কুমারখালী থানার ওসি আকিবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করা হচ্ছে। নিহতের পরিবারের কেউ এখনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।