মোঃ রবিউল ইসলাম হৃদয় (কুষ্টিয়া) : কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নে অবস্থিত কয়া চাইল্ড হেভেন গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু সালেহের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের নামে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে প্রধান শিক্ষক আবু সালেহ দুইটি এমপিওভুক্ত স্কুলের শিক্ষকতা করার প্রমানও পাওয়া গেছে। এসব অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যের  নিউজ চলতি বছরের জুন মাসের ২৬ তারিখে কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত একাধিক গনমাধ্যমে সংবাদ  প্রকাশিত হলেও এখনো পর্যন্ত কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করেনি কুমারখালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিস।
সুত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে কয়া চাইল্ড হেভেন গার্লস হাই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ দিন যাবত নন এমপিও ভাবেই চলছিলো স্কুলের পাঠদান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে আবু সালেহ পরিচালনা করছিলেন। প্রায় ২২ বছর সেখানে ১১ জন শিক্ষক কর্মচারীরা বিনা বেতনে পরিশ্রম করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করিয়েছেন। দীর্ঘ ২২ বছর পর চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়। স্কুলটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষক শুরু করেছে শিক্ষক /শিক্ষিকাদের কাছ থেকে এমপিওভুক্ত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ঘুষ বানিজ্য। স্কুল এমপিও হবার আগে পুরাতন যেসব শিক্ষকরা চাকরী করে আসছে প্রধান শিক্ষক তাদের এমপিও নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করছে। এমন অবৈধভাবে টাকা দাবি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বসেছে স্কুলটির শিক্ষক/শিক্ষিকারা। অনেকের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে এমপিও হিসেবে নিয়োগও দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
শুধু তাই নয় স্কুলটির ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষক আবু সালেহের আপন বড় ভাই হবার কারনে কোন প্রকার নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই এসব বানিজ্য করে বেরাচ্ছেন তিনি। বিদ্যালয়টির স্থাপিত হবার সময় থেকেই ঘরোয়াভাবে কোন প্রকার ভোট ছাড়াই ম্যানিজিং কমিটি তৈরি করে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বড় ভাই মোঃ সেখ আব্দুল হাকিম। এর আগে চলতি বছরের গত ২৩ ফেব্রুয়ারী মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে কটূক্তি ও বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগে কয়া চাইল্ড হেভেন গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সালেহকে গ্রেপ্তার করেছিলো পুলিশ। যার মামলা নম্বর ২৬।
বিশ্বস্থ সুত্রে আরও জানা যায়, কয়া চাইল্ড হেভেন গার্লস হাইস্কুলে ৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আলাউদ্দিন নগর হাফসা বালিকা মাদ্রাসার আব্দুস সালাম নামের একজনকে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। যেদিন প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার হয় সেদিনও তিনি ২ লক্ষ টাকা আব্দুস সালামের নিকট থেকে গ্রহন করেছেন বলেও শোনা গেছে । এই ধর্মীয় শিক্ষক আব্দুস সালামকে ২০০৫ সালে নিয়োগ দেখানো হয়েছে৷ অথচ তিনি স্কুলে ক্লাসেই যাননি। এমপিও হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেও তিনি স্কুলে যাননি। কয়েক মাস আব্দউস সালামের পরিবর্তনে তার মেয়ে গিয়ে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে যা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অবৈধ।দীর্ঘ দিন যাবত একজন স্কুলে কৃষিতে শিক্ষকতা করতেন। ২০১৩ সাল তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন।তার কাছ থেকে এমপিও হওয়ার কথা বলে প্রধান শিক্ষক আবু সালেহ ২ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা নিয়ে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আরেকজন বাংলা শিক্ষক হিসেবে ২০০৫ সাল থেকে শিক্ষকতা করছেন। এমপিও বাদে নিয়োগ ছিলো। প্রধান শিক্ষক এমপিও নিয়োগের জন্য ৬ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করছেন এবং প্রতিনিয়ত তার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন তিনি।
অপরদিকে কয়া চাইল্ড হেভেন গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সালেহ  আলাউদ্দিন নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবেও চাকরী করে যাচ্ছেন। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে  তিনি একই সাথে দুই জায়গায় চাকরী করে যাচ্ছেন এবং  সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে বেতনের টাকা তছরুপ করছেন। এছাড়াও চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে তিনি আলাউদ্দিন নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে না গিয়ে কয়া চাইল্ড হেভেন গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় দীর্ঘ ৬ মাস আলাউদ্দিন নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন। তবুও তিনি নিয়মিত বেতন উত্তোলন করে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। আর এসব কাজে তাকে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করেছেন আলাউদ্দিন নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান। একজন সহকারী শিক্ষকের দুই জায়গায় শিক্ষকতা করছেন জেনেও তিনি আইনগতভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি৷
কয়া চাইল্ড হেভেন গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সালেহের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এই স্কুলটিতে আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। স্কুলটি এমপিও করার জন্য জায়গা কম ছিলো এজন্য জায়গা কিনেছি। আমি যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি এগুলো জমি কেনার জন্য নিয়েছি। এমপিও হিসেবে নিয়োগ নেওয়ার জন্য সবাই জমি কেনার জন্য টাকা দিয়েছে। আমি চাকরী দেওয়ার জন্য টাকা নেয়নি। আর আমি আলাউদ্দিন নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে স্কুলে যাই কিন্তু হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করিনা। বেতনও তুলিনা।
বিষয়টি নিয়ে আলাউদ্দিন নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানানা, আসলে আবু সালেহ দীর্ঘ দিন আমাদের এখানে শিক্ষকতা করছেন।২০১০ সালে এই স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়েছে। এখন সালেহ একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়েছেন। সেই স্কুলটিও এমপিওভুক্ত হয়েছে।তিনি দুইটি স্কুলেই ক্লাস নেন। এটা মানবতায় কিছু বলিনা। তাই বলে কিন্তু তিনি আমাদের স্কুল থেকে বেতন তোলেন না শুধু বেতনের খাতায় সই করে টাকা তোলেনা।
বিষয়টি নিয়ে কুমারখালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী এজাজ কাইসারের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি কুষ্টিয়া জেলা শিক্ষা অফিসার, ও ডিডি স্যারের নলেজেও আছে। আমরাও জেনেছি। আমরা তদন্তপূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহন করবো।
এবিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা (ভারপ্রাপ্ত)শিক্ষা অফিসার মোঃ আখতার হোসেনের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ডিডি স্যারকে জানিয়েছি৷ এটার কি রকম বিধি বিধান আছে সেটা দেখার কাজ চলছে। আমরা ব্যাবসঘা গ্রহনের প্রস্তুতি নিচ্ছি৷

Previous articleকুষ্টিয়ায় জামায়াতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত
Next articleর‍্যাবের সকল ব্যাটালিয়নের মধ্যে আভিযানিক কার্যক্রমে সেরা হয়েছে র‍্যাব-১২ সিরাজগঞ্জ