মোঃরবিউল ইসলাম হৃদয় : কুষ্টিয়ায় র্যাবের বিশেষ অভিযানে দৌলতপুর উপজেলারবীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ ইসমাইল হোসেন এর ছেলে মোঃ সেন্টু আলী ওরফে বাটুল (৩৯) কে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সহ ২ জন গ্রেফতার হয়েছে।
শুক্রবার (০৭ জুলাই ২০২৩) বেলা ১০ টার সময় কুষ্টিয়া র্যাব ক্যাম্পের সম্মেলন কক্ষে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১২ সিরাজগঞ্জ হেডকোয়ার্টারে উপ-অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন কুষ্টিয়া দৌলতপুর থানাধীন বাগোয়ান টেনশন মোড় এলাকার মৃত রওশন জালালের ছেলে হত্যা মামলার এজাহার নামীর প্রধান আসামী মোঃ মিজানুর রহমান(৫৩) এবং তার ভাই ২নং আসামি মোঃ হাসিবুর রহমান (৪৭)।
র্যাব সুত্রে জানা যায়, গত ২১ জুন ২০২৩ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৬ টারসময় দৌলতপুর উপজেলার বাগোয়ান টেনশন মোড় এলাকায় ভোরের আলো ক্লাবের সামনে পাঁকা রাস্তার উপর বাগোয়ান গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইসমাইল হোসেন এর ছেলে মোঃ সেন্টু আলী ওরফে বাটুল (৩৯)কে একই গ্রামের প্রতিপক্ষের লোকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দ্বারা গুরুতর আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দৌলতপুর উপজেলার ২নং মথুরাপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে পরপর তিনবার নির্বাচিত মেম্বার মোঃ হাসিবুর রহমান এর সাথে মৃত মোঃ সেন্টু আলীর (মেম্বার) পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন সেন্টু আলী ।প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোঃ হাসিবুর রহমান মেম্বার এর কাছে হেরে যাওয়ার পর থেকে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে নির্বাচনের পর থেকে বর্ণিত হত্যাকান্ডের পূর্ব পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিক মারামারিকোপাকুপির ঘটনায় উভয় পক্ষের একাধিক মামলা রুজু হয় । এরই জের ধরে হাসিবুর রহমান মেম্বার তার আপন ভাইদের সহ আত্নীয়-স্বজন দলীয় লোকজন নিয়ে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র সহ হত্যাকান্ডের পূর্বে বাগোয়ান টেনশন মোড় এলাকায় উপস্থিত হয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে।
হত্যাকান্ডের প্রেক্ষিতে নিহত মোঃ সেন্টু আলীর পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে ঘটনার পর গঅত ২৩ জুন ২০২৩ ইং তারিখ প্রতিপক্ষ মোঃ হাসিবুর রহমানের বড় ভাই মোঃ মিজানুর রহমান ও তার ভাইদের সহ আত্মীয়-স্বজন/দলীয় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৭৩, তারিখ-২৩/০৬/২০২৩ ইং, ধারা-৩০২/৩৪/১১৪ পেনাল কোড। প্রকাশ্যে সন্ধ্যার পূর্বে মানুষ চলাচলের রাস্তার উপর সংঘটিত হত্যাকান্ডের বিষয় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা সহ ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে সমস্ত জেলা তথা দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে, মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে র্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার সিনিঃ এএসপি মোঃ গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে র্যাবের একটি
আভিযানিক দল কুষ্টিয়া জেলার পার্শ্ববর্তী পাবনা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলায় পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের গোয়েন্দা নজরদারি রাখে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মামলার প্রধান আসামি আরও একজন আসামি সহ ঢাকা শহরে আত্মগোপনে আছে বলে জানা যায়। অবশেষে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় র্যাব-১২ এর সিপিসি-১ কুষ্টিয়া ক্যাম্প এবং র্যাব-৪ এর সিপিসি-১ মিরপুর ক্যাম্পের যৌথ আভিযানিক দল গত ০৬ জুলাই ২০২৩ ইং তারিখ দুপুর সাড়ে ৩ টার সময় ঢাকা মিরপুর পাইকপাড়া এলাকা থেকে প্রধান দুই আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মৃত মোঃ সেন্টু আলী ওরফে বাটুল (৩৯)কে হত্যাকান্ডে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহনের কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। স্থানীয় জনগণ অনেকেই গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে সরাসরি হত্যাকান্ডে অংশগ্রহন করতে দেখেছে বলে জানা গেছে। আসামিগণ এলাকায় দাঙ্গাবাজ ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির হিসেবে পরিচিত বলেও জানিয়েছেন র্যাব।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামীদের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আদালতে প্রেরণ করেন র্যাব।