পেরোননি মাধ্যমিকের গন্ডি। তবে সব ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হয়ে ওঠেন একজন সাংবাদিক বা গণমাধ্যম কর্মী। নিজে এই বিভিন্ন মিডিয়ার নাম দিয়ে সাংবাদিক সেজে মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের দেখাতেন মামলার ভয়। এভাবে প্রায় কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন বহু টাকা। চঞ্চল আলী (৩০) নামের এই ভুয়া সাংবাদিককে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ খুঁজছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনসহ একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায় গত ২৫ মে ভেড়ামারা শিল্পী ক্লিনিকের মালিককে মারধর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে অপরিচিত মেয়ের সাথে আপত্তিকর ছবি ধারণ করার হুমকি দিয়ে ২লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। ঐ ব্যক্তি মান সম্মানের ভয়ে চঞ্চলের কাছে ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। বাকী টাকার জন্য শিল্পী ক্লিনিকের মালিক আশরাফুল ইসলামকে জোর করে একটি ১০০ টাকার ৬টি ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে অভিযোগ উঠেছে। এটা করেও ক্ষান্ত হননি ঐ মালিকের দুইটি মোটর সাইকেল কৌশলে নিয়ে যায়। ঘটনার বিষয়টি দৌলতপুর থানার পুলিশকে জানালে আল্লারদর্গা বাজারে একটি মোটর সাইকেলের পুরাতন শোরুমে সঠিকভাবে কাগজপত্র না দেখাতে পারলে পুলিশ ৫টি মোটর সাইকেল জব্দ করেন। এ বিষয়ে শিল্পী ক্লিনিকের মালিক নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মিরপুর উপজেলার রফিকুল ইসলাম আলমের ছেলে চঞ্চল আলী (৩০), আব্দুল গনির ছেলে তুজাম্মেল (৩৮), ভাদালিয়ার আলাউদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩০) রিফায়েতপুর নওদাপাড়ার মৃত আনোয়ারের ছেলে মেহেদী হাসান (২৭) দৌলতপুর জেলার আশিক (৩২), ককাগহাটি তাহের মোড়ের মৃত ছলি মালিথার ছেলে নওয়াব আলী (৪৫), আশিকের স্ত্রী শাপলা খাতুন ও নওয়াব আলীর স্ত্রী মিনারা খাতুন (৪৫), মিরপুর হলুদ বাড়ীয়া মৃত আলতাফ হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন রাজিব (৩৫), নতুন আমদহ গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে শাহাজালাল ওরফে রনি (২৮) ১০জনের বিরুদ্ধে নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন।
এছাড়াও এ চঞ্চলের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। বেশকিছুদিন ধরে কুষ্টিয়ায় চঞ্চল প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হতে বসেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক ও তার পরিবার। পূর্বের একাধিক বিয়ের কথা গোপন ওই ব্যবসায়ী মেয়ে সাথিকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করে কথিত সংবাদকর্মী প্রতারক এম এ চঞ্চল। পরে যৌতুকের জন্য ধারবাহিক নির্যাতনের কারণে বাবার বাড়ি পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাথি। যৌতুক না পেয়ে চঞ্চল শ্বশুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ৫টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগি পরিবারটির। চঞ্চলের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া গ্রামে। পূর্বের একাধিক বিয়ের কথা গোপন করে তিনি দৌলতপুর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে সাথী আক্তার মলিকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেন ২০১৭ সালে। চঞ্চল বিয়ের সময় নিজেকে সংবাদকর্মী বলে পরিচয় দেন। পরে দাবিকৃত যৌতুক না পেয়ে একটি সন্তান হওয়ার পর সাথী ও তার সন্তানকে চঞ্চল অত্যাচার ও নির্যাতন করে কেবল বাড়ি ছাড়তেই বাধ্য করেননি তাকে শায়েস্তা করতে বাবা আব্দুর রাজ্জাকের নামে চঞ্চল ৫টি মিথ্যা মামলাও করেছেন আদালতে। এদিকে সাথিকে বাড়ি ছাড়া করার পর আরও একটি বিয়ে করেছে বলে সাথির অভিযোগ।
সাথি আক্তার মলি বলেন দীর্ঘদিন ধরে সাথি ও তার সন্তান বাবার বাড়িতে থাকলেও চঞ্চল তাদের খোঁজ নেন না। অন্যদিকে জামাইয়ের দেওয়া ৫ মামলায় বারবার আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে সর্বশান্ত হতে বসেছে আব্দুর রাজ্জাক ও তার পরিবার। রাজ্জাকের অভিযোগ মামলা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ৩ লাখ টাকা দাবি করেছে চঞ্চল।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন প্রতারক চঞ্চলের হাত থেকে বাঁচার আকুতি এখন পরিবারটির, একই দাবি প্রতিবেশিদেরও।
সাথির মা বলেন তবে কথিত সংবাদকর্মী চঞ্চল শ্বশুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করলেও ২টি মামলার কথা স্বীকার করেন।
মামলাবাজ প্রতারক চঞ্চলের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলু বলেন জেলায় ভুয়া সাংবাদিকদের দৌরাত্ম বেড়ে গেছে। এদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে তারা মানুষকে নানাভাবে প্রতারণা করছে। এতে প্রকৃত সাংবাদিকদের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে। সাংবাদিক এবং সাংবাদিকতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল মেসেজ যাচ্ছে। তাই ভুয়া সাংবাদিকদের প্রতিহত করতে প্রকৃত সাংবাদিকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে এই সাংবাদিক নেতা স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতাও কামনা করেন।