কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রেখা খাতুন নামে এক রোগীকে নিয়ে আসেন স্বজনরা। এসময় জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে ওই নারীকে মৃত ঘোষনা করেন। ওই নারীর স্বজনদের দাবি, রেখা খাতুন ষ্টোক করলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তবে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সন্দেহ হলে পুলিশ কেসের সিল মেরে লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে রোগীর স্বজনরা। ময়না তদন্ত শেষে লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসদের ওপর হামলা করে স্বজনরা।
এসময় মুহাঃ শাহরিয়াজ জ্বাকী নামে এক ডাক্তারকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে এ হামলার ঘটনা ঘটে। মর্গে দায়িত্বে থাকা কনষ্টেবল হাবিব জানান, সোমবার সকালে দিকে কুষ্টিয়া শহরের আলফার মোড় এলাকার আলিমের স্ত্রী রেখা খাতুন অসুস্থ হলে রোগীর স্বজনেরা দ্রুত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এসময় কর্তব্যরত ডাক্তার চিকিৎসা শেষে ওই নারীকে মৃত ঘোষনা করেন। রোগীর স্বজনেরা জানায় ষ্টোক করে মারা গেছে। কিন্ত কর্তব্যরত চিকিৎসক মুহাঃ শাহরিয়াজ জ্বাকী রোগীকে ভালোভাবে দেখেন এবং মৃত্যুর আলামত দেখে সন্দেহ হয়।
তিনি তাৎক্ষনিক লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে কর্তব্যরত কর্মচারীকে পুলিশ কেসের সিল মারতে বলেন এবং লাশ ময়না তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। দুপুরের দিকে ময়না তদন্ত শেষে রেখা খাতুনের মরদেহ বাড়ীতে নিয়ে যান স্বজনরা। রেখা খাতুনের মরদেহ বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েই লাশের ময়না তদন্ত করায় জরুরী বিভাগে হামলা করে দায়িত্বরত চিকিৎসককে এলোপাতারী ভাবে মারতে থাকেন ক্ষিপ্ত রোগীর স্বজনরা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নিহত রেখা খাতুনের ভাই রকি বলেন, আমার বোন আলফা মোড়ে ভাড়া থাকত। সকালে অসুস্থ হলে বাড়ির মালিক স্ট্রোক করেছে বলে তাকে দ্রুত ভাবে জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমার বোন মারা যায়। তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমার ভাগ্নে রিশাদকে মারধর করার কারণে আমি ও আমার মা বাধা দিলে আমাদের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করে। পরে এসব বিষয় মিমাংশা হয়ে গেছে। আমার বোনের লাশ ডাক্তার কেন মর্গে প্রেরণ করেছে তা ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞাসা করতে গিয়েছিলেন আমার ছোট দুলাভাই ফারুক। এরপর কি হয়েছে আমি তা জানি না।
এবিষয়ে ডাক্তার মুহাঃ শাহরিয়াজ জ্বাকী বলেন, সকালের দিকে রেখা খাতুনকে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসেন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে। পরে রোগীকে দেখে তার সন্দেহ হলে তাৎক্ষনিকভাবে ময়না তদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়। এতে রোগীর স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে শাটের কলার ধরে ধস্তাধস্তি করে। পরে হাসপাতালে দায়িত্ব থাকা পুলিশ খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিবেশ শান্ত করে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন তাকে জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরীর প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান। আবাসিক মেডিকেল অফিসার আশরাফুল আলম বলেন বিষয়টি তিনি জানেন না। এ ধরনের ধস্তাধস্তি বা হুমকির বিষয়ে কেউ তাকে কোন অবগত করেননি বলে তিনি জানান।
উল্লেখ যে, রেখা খাতুন হরিপুর এলাকায় তার মা ও ভাইকে নিয়ে থাকাত। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ২০২১ সালে রেখা খাতুনের মা ও ভাইয়ের নামে অভিযোগ দায়ের করে। পরবর্তীতে উভয় পক্ষের সম্মতি সেটা মিমাংশা হয়। উক্ত অভিযোগটি থানাকে প্রত্যাহার করে নেন।