আমিন হাসানঃ কুষ্টিয়ায় পারিবারিক কলহের জেরে রত্না খাতুন (৩৫) নামে দুই সন্তানের মাকে গলাটিপে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে। হত্যার পর স্বামী নিজেই থানায় গিয়ে স্ত্রীকে হত্যার কথা জানিয়ে পুলিশকে ডেকে নিয়ে আসেন।
বুধবার (১৫ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়ার কলেজমোড় এলাকায় রাজু আহম্মেদ সড়কের একটি বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্লাটে হত্যাকাণ্ডে ঘটে। এ ঘটনায় স্বামী রনি হোসেন ও শাশুড়ি লিলি খাতুনকে আটক করেছে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ।
নিহত রত্না কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চারমাইল এলাকার নাজিম উদ্দিনের মেয়ে ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের রনি হোসেনের স্ত্রী। রনি হোসেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, বুধবার (১৫) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রত্নাকে সঙ্গে নিয়ে তার স্বামী রনি হোসেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈলের বাড়ি থেকে কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়ার কলেজমোড় এলাকায় রাজু আহম্মেদ সড়কের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে আসার পর রনি হোসেন রাত ৮টার দিকে রত্নাকে গলাটিপে হত্যা করেন। পরে রনি হোসেন কুষ্টিয়া মডেল থানায় গিয়ে স্ত্রী রত্নাকে গলাটিপে হত্যার কথা পুলিশকে জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তৃতীয় তলার ডানপাশের ফ্লাটের শৌচাগারের ভেতর পড়ে থাকা অবস্থায় রত্নার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। পরে রনি ও তার মা লিলিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ বিষয়ে রত্নার মা বলেন, আমি আজ আমার জামাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম আমার মেয়ে আমাকে রান্না করে খাওয়াবে বলে। কিন্তু সন্ধ্যায় আমার জামাই আমাকে রেখে মেয়েকে নিয়ে তার মা যে মেসে রান্নার কাজ করে সেখানে নিয়ে যায়। আমি পরে রাত ৯টায় জানতে পারি আমার মেয়ে মারা গেছে।
নিহত রত্নার বাবা নাজিম উদ্দীন বলেন, আমার মেয়ে তার মায়ের সঙ্গে জামাই বাড়ি গিয়েছিল। সেখান থেকে আজ সন্ধ্যায় জামাই আমার মেয়েকে নিয়ে তার মা যে মেসে কাজ করতো সেখানে নিয়ে যায়। রাতে আমার স্ত্রী ফোন করে বলে জামাই মেয়েকে মেরে ফেলেছে। পরে আমি ওই মেসে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। আমার মেয়েকে জামাই ও তার মা মিলে পরিকল্পিতভাবে এ মেরে ফেলেছে।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নিশি কান্ত জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে এক ব্যক্তি থানায় প্রবেশ করে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে জানায় সে তার স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যা করেছে। এর একপর্যায়ে সে আমার কাছে আসে। আমার কাছেও একই কথা জানালে আমিও প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। রনি এসময় সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। পরে টহল পুলিশের গাড়িতে করে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে তার দেওয়া ঠিকানার ওই বাড়িতে যায়। আমরা ওই বাড়ির তৃতীয় তলার ডানপাশের ফ্লাটের শৌচাগারের ভেতরে পড়ে থাকা রত্নার মরদেহ দেখতে পায়। পরে রনিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
পুলিশ পরিদর্শক নিশিকান্ত আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা পারিবারিক কলহের কারনে মানসিক অস্থিরতা থেকেই রনি তার স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যা করেছে বলেও পুলিশকে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সাব্বিরুল আলম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। গৃহবধূকে হত্যার ঘটনায় নিহত গৃহবধূর শাশুড়ি ও তার স্বামীকে আটক করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। রনিকে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।