১৬ মে ২০২২ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গ্রামীণ মেলার অনুমতি নিয়ে চলছে রমরমা র্যাফেল ড্র লটারি বাণিজ্য। মেলা শুরুর দিন থেকেই এই অবৈধ র্যাফেল ড্র এর নামে চলছে লটারি বাণিজ্য। এই অবৈধ র্যাফেল ড্র এখন মেলার মূল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি চটকদার সব বিজ্ঞাপন প্রচার করে এবং মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন রকম পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে র্যাফেল ড্র এর টিকিট বিক্রি করতে পিকআপ, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে করে শতাধিক লটারি বিক্রেতা কুমারখালী উপজেলা, পাশ্ববর্তী খোকসা উপজেলা, রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামসহ কুমারখালী পৌর এলাকা চষে বেড়াচ্ছে। এসব বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে মোটরসাইকেল, সাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন রকম পুরস্কার পাওয়ার আশায় গ্রামের নিরীহ মানুষ প্রতিদিনই এই লটারি কিনছেন। এভাবেই র্যাফেল ড্র এর নামে প্রতিদিন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মেলার আয়োজক ও র্যাফেল সংশ্লিষ্টরা। এতে আর্থিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এতে এলাকায় চুরি ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার আশংকা করছে সচেতন মহল।
এর আগে এই মেলা থেকেই র্যাফেল ড্র এর লটারি বিক্রি করে পুরস্কার না দিয়ে রাতের আঁধারে ১০ লাখেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালানোর অভিযোগ রয়েছে একটি র্যাফেল ড্র কোম্পানির বিরুদ্ধে। এরপর বেশ কয়েক বছর র্যাফেল ড্র বন্ধ থাকলেও করোনা মহামারির নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর আবার গ্রামীণ মেলার নামে র্যাফেল ড্র এর আয়োজন করেছে এই মেলার আয়োজকরা।
এদিকে কয়েকদিন ধরে গ্রাম, শহর ও এর আশে পাশের মোড়ে মোড়ে প্রকাশ্যে পিকআপ, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক থামিয়ে মাইকে বিজ্ঞাপন প্রচার করে জান র্যাফেল ড্র নামের অবৈধ এসব দৈনিক র্যাফেল ড্র লটারি বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই র্যাফেল ড্র এর লটারির ড্র অনুষ্ঠান প্রতিদিন কুষ্টিয়ার কেবল টিভি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে চললেও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চাপাইগাছি এলাকায় চলছে ঐতিহ্যবাহী চাপাইগাছি গাজী কালু চম্পাবতীর মেলা। মেলার পেছনের দিকে র্যাফেল ড্র এর মঞ্চে সাজিয়ে রাখা হয়েছে টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ নানা রকম পুরস্কার। মাইকে লাগাতার বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এই মঞ্চের সামনেই টেবিল-চেয়ার পেতে লটারি বিক্রি করছেন একাধিক লটারি বিক্রেতা। এখান থেকে লটারি কিনছেন শিশুসহ অনেকেই। মেলার প্রবেশ মুখের অদূরে চারদিক টিন দিয়ে ঘিরে যাত্রা মঞ্চও তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আপাতত চলছে কৌতুক, প্রস্তুতি চলছে অশ্লীল নৃত্যের। আয়োজনের দুই একদিনের মধ্যে সুযোগ বুঝেই শুরু হবে সেসব নৃত্য। যাত্রা মঞ্চের ঠিক পেছনেই একটা জায়গা বানানো হয়েছে জুয়া খেলার জন্য। সেটাও সুযোগের অপেক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে।
এ ছাড়াও কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর, হাসিমপুর, তারাপুর, কুমারখালী শহরের বাসস্ট্যান্ড, বাটিকামারা, কাজীপাড়া মোড়, গণমোড়, হলবাজার, দূর্গাপুর, সেরকান্দী, আালাউদ্দিন নগর, খোকসা উপজেলার বাসস্ট্যান্ড, কমলাপুর, সোমসপুর, সেনগ্রাম, কালিতলা, গোপগ্রাম, আমবাড়িয়া, খোকসা খেয়াঘাট, রাজবাড়ী জেলার পাংশার বাহাদুরপুর, হাবাশপুর এলাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পিকআপ, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক থামিয়ে মাইকে চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে মোটরসাইকেল, সাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন রকম পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ এসব র্যাফেল ড্র এর লটারি বিক্রি করা হচ্ছে। মাইকে এসব লোভনীয় বিজ্ঞাপন শুনে লটারি কিনতে পিকআপ, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে থাকা লটারি বিক্রেতাদের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। কেউ কেউ ২০ টাকা মূল্যের এই লটারি ৪ থেকে ৫ টিও কিনছেন। কেউ কেউ আবার ১০টি লটারিও কিনছেন। এভাবে চলতে থাকলে এলাকায় চুরি ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় আশংকা করছেন সচেতন মহল।