আমিন হাসানঃ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের শশীধরপুর গ্রামে সাপের কামড় আতংকে দিন কাটাচ্ছে গ্রামবাসীর। গেল তিন সপ্তাহে এখানে অন্তত ৩০ জনকে সাপে কেটেছে। এর মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সাপ আতঙ্কের এই সুযোগে গ্রামবাসীকে নানা কারসাজিতে ফেলছেন স্থানীয় ওঝারা।
শশীধরপুর পূর্ব পাড়ায় শিশু মরিয়মের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই ঘটনা প্রবাহের শুরু। গেল ২৯ মার্চ চার বছরের শিশু মরিয়মকে সাপে কেটেছে ধারণা করে ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুক করে পরিবার ও প্রতিবেশিরা। কিন্তু কোন ফল পায়নি তারা। শশীধরপুরে নানীর বাড়িতে বেড়াতে আসা মরিয়ম শায়িত হয়েছে নানার এলাকার কবরস্থানে।
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসক। তবে, সাপে কামড়ে মৃত্যু হয়েছে কি-না বিষয়টি চিকিৎসকরা নিশ্চিত করতে পারেননি। শিশুটির স্বজনেরা জানিয়েছেন পায়ে ক্ষতচিহ্ন দেখে সাপের কামড় ধারণা করে ওঝা ডাকা হয়। ঘণ্টা দুয়েক ওঝাদের তন্ত্র মন্ত্র আওড়ানোর পর শিশুটি নিস্তেজ হয়ে আসলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করলেও বাড়িতে এনে ফের ঘন্টা দুয়েক তন্ত্র মন্ত্র পড়তে থাকেন ওঝারা।
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তৌহিদুল হাসান তুহিন জানান, মরিয়মকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়েছিলো। গ্রামবাসীর কেউই সাপ দেখেননি। সামান্য আঘাতকে গ্রামবাসীরা সাপে কাটা বলে ধারণা করছেন। তবে ওঝারা এটিকে সাপের কামড় বলে নিশ্চিত করেন।
এই সুযোগে গ্রামবাসিকে সাপের বিষ মুক্তির নানা কারসাজির ফাঁদে ফেলছে ওঝারা। ঝাড় ফুককারী ওঝাদের অন্যতম শাহাব ওঝাবলেন, আমরা বিশ্বাসের ওপর থেকে এটা করি, আবেগের কারণে করি।
সাপে কাটার আতংক কাটাতে স্বাস্থ্যকর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম।
গ্রামবাসিদের দাবি, গেল তিন সপ্তাহে অন্তত ৩০ জনকে সাপে কেটেছে। এদের মধ্যে মরিয়ম মারা গেলেও বাকিদের স্থানীয় ওঝারা চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন।