আমিন হাসানঃ গবেষণায় উঠে এসেছে ভয়ংকর তথ্য কুষ্টিয়ায় বৃটিশের নীল চাষ এলাকা বেছে নেওয়া হয়েছে তামাক চাষে। কুষ্টিয়ায় বর্তমানে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৭৭৮ জন। কুষ্টিয়ায় ১৮০০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী নীল চাষ শুরু করে। জমির উর্বরতা কমে যাওয়ায় এবং খাদ্য শস্য না হওয়ায় কৃষকেরা নীল চাষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ গড়ে তুলে। এক পর্যায়ে নীল চাষ বন্ধ করতে বাধ্যহয় বৃটিশ শাসকেরা । ১৯০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন নীলকুঠি উঠে যাওয়ার মাধ্যমে বাংলায় সম্পূর্ণভাবে নীলচাষের অবসান ঘটে। গবেষনায়
উঠে এসেছে এক ভয়ংকর তথ্য।বৃটিশের সেই নীল চাষ এলাকায় তামাক চাষের মাধ্যমে তারা নীল বিদ্রোহের মধুর প্রতিশােধ নিচ্ছে কুষ্টিয়াসহ বাংলার কৃষকদের বিরুদ্ধে।প্রথমে এ এলাকায় বৃটিশরা বিএলটিসির মাধ্যমে কৃষকদের নানা প্রলােভন দিয়ে তামাক চাষ শুরু করলেও পরবর্তিতে বৃটিশ টোব্যাকো কোম্পানী (বিটিসি) সরাসরি নিজেরাই কৃষকদের মাঝে অর্থলগ্নি করে তামাক চাষে মাঠে নামে।কুষ্টিয়াসহ বাংলাদেশে যখন ধুমপান বিরােধী,তামাক বিরােধী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিরােধ গড়ে উঠতে শুরু করে ঠিক তখন কঁাছা মেরে মাঠে নামে বৃটিশ আমেরিকা টোব্যাকো নামে এই প্রতিষ্ঠানটি। এরসাথে ঢাকা টোব্যাকো যা এখন জাপান টোব্যাকো নামে মাঠে রয়েছে।এই কোম্পানীগুলাে স্থানীয় হােমড়া চোমড়াদের দিয়ে গড়ে তুলে দালাল চক্র। যারা অভাবী কৃষকদের অভাবের সুযােগ নিয়ে দাদনে অর্থ দেয়। আর পুরাে পরিবার কলুর বলদের মতাে খাটতে থাকে তামাকের পেছনে। বাড়ির সাথে তামাক পােড়ানাের ভাটি করে সেখানে পােড়ানাে হচ্ছে তামাক।ফলে পরিবারের নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা তামাক জনিত রােগে আক্রান্ত হচ্ছে। তামাক প্রবণ
এলাকায় প্রতিবন্ধির সংখ্যা। মারাত্মকহারে বাড়ছে। জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,কুষ্টিয়ায় বর্তমানে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৪৭হাজার ৭৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৯ হাজার ৭৩২ ও নারী ১৮ হাজার ২৯৭
জন। এ ছাড়া হিজড়া প্রতিবন্ধী আছেন৬৮ জন। এ জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী রয়েছেন দৌলতপুর
উপজেলায়। এখানে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা রয়েছেন ১৪ হাজার ১৫৮। এছাড়া ভেড়ামারা উপজেলায় ৪ হাজার ৪৪৫,
খােকসা উপজেলায় ৩ হাজার ২৪৭, কুমারখালী উপজেলায় ৬ হাজার ৮৩২,মিরপুর উপজেলায় ৮ হাজার ৫১৯ ওকুষ্টিয়া সদর উপজেলায় রয়েছে ১০হাজার ৫৭৭ প্রতিবন্ধী রয়েছেন।ইউনিয়নভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা
যায়, কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী রয়েছেন ৭৪২ জন। এ ইউনিয়নের উত্তর কয়া গ্রামে
এমন একটি পরিবার আছে, যেটির ১৭ জন সদস্যই প্রতিবন্ধী। পরিবারটিতে আরও কয়েকজন প্রতিবন্ধী সদস্য
ছিলেন, তবে তারা মারা গেছেন।প্রতিবন্ধী রয়েছেন এমন প্রতিটি পরিবারই দুঃসহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।এতে পরেও কুষ্টিয়ায় কোনােভাবেই কমছে তামাক চাষ। বিভিন্ন তামাক কোম্পানির প্রলােভনে জীবনের ঝুঁকি জেনেও, তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা ফলে তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা
নষ্ট হচ্ছে এবং ফসল আবাদ কমে যাচ্ছে। জেলার মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর উপজেলার ফসলি জমিতে
শুধু তামাকের ক্ষেত তবে ঝুঁকি জেনেও থেমে নেই অবুঝ কৃষকেরা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার পরমানিকের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান বিষাক্ত তামাক চাষে কৃষক সহ সাধারন মানুষ অনেক ঝুঁকিতে রয়েছে এ বিষয়ে আমরা অনেকবার অনেক স্থানে সচেতন মূলক কথাবার্তা ও কৃষকদের নিয়ে অনেকবার আলোচনা করেছি তবু অবুঝের মতো ঝুঁকছে বিষাক্ত এই তামাক চাষে।